সেন্টমার্টিন

মহান সৃষ্টিকর্তার এক অপরূপ সৃষ্টি বঙ্গোপসাগর। বঙ্গোপসাগরে প্রায় ৫০০ এর অধিক দ্বীপপুঞ্জ থাকলেও এদের মধ্যে মাত্র ৩৫ টি তে মানুষের বসবাস রয়েছে। বাংলাদেশের জলসীমায় বঙ্গোপসাগরের কোন দ্বীপপুঞ্জ নেই। তবে বেশ কিছু ছোট-বড় দ্বীপ রয়েছে। এদের মধ্য একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। এ দ্বীপটি নারিকেল জিঞ্জিরা নামেও পরিচিত।  বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার একটি ইউনিয়ন সেন্টমার্টিন। সেন্টমার্টিনের আয়তন ৮ বর্গ কিলোমিটার। সেন্টমার্টিনকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। উত্তর পাড়া, মধ্য পাড়া, পূর্ব পাড়া এবং ছেড়াদিয়া। সহজ-সরল আর পরিশ্রমী মানুষের আবাসস্থল এ দ্বীপটির পরিবেশ আসলেই চমৎকার। বাংলাদেশের যেসব পর্যটন স্পট সহজেই মানুষের মন কাড়ে তার মধ্যে প্রথমদিকেই রয়েছে সেন্টমার্টিন। সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনগামী জাহাজগুলো যাতায়াত করে। এ সময়টাকে বলা হয় পিক সিজন। বছরের অন্য কোন সময় সেন্টমার্টিন যেতে হলে ট্রলারে করে যেতে হয়।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

বলা হয়ে থাকে, মুগ্ধতার আরেক নাম সেন্টমার্টিন। চারদিকে বিশাল সমুদ্রের সুনীল জলরাশি আর প্রবালের বুকে সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পরার এক অপরূপ দৃশ্য। সেন্টমার্টিনে প্রচুর নারিকেল গাছ আপনাকে বিশ্মিত করবে। ধারনা করা হয়, অষ্টম শতকের দিকে আরব বণিকদের একটি বাণিজ্যিক জাহাজ এ দ্বীপের কিনারায় নোঙ্গর করেছিল। এখানে এত নারিকেল গাছের আধিক্য দেখে তারাই এর নামকরন করেছিল নারিকেল জিঞ্জিরা। সেন্টমার্টিন দ্বীপটি খুব বেশি বড় না হওয়ার কারনে এই পুরো দ্বীপটি ভ্রমন করতেও খুব বেশি সময় লাগে না। আপনি যদি সাইকেল চালানোতে পারদর্শী হন তাহলে আপনাকে আর পায় কে!! দ্বীপের জেটি ঘাটের পাশেই বেশ কিছু দোকানে ঘন্টা হিসাবে সাইকেল ভাড়া দেয়া হয়। ভালভাবে দামাদামি করে একটি সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পরুন। সাগরের তীরঘেষে বয়ে যাওয়া বালু আর প্রবালের প্রাকৃতিক এবরো থেবরো রাস্তা ধরে চালিয়ে যেতে পারেন মনের মাধুরি মিশিয়ে। সেই সাথে দেখতে পারেন সাগরকন্যার মেলে ধরা অসাধারন সব সৌন্দর্য। যদি সন্ধার আগে বের হন তাহলে দেখতে পারেন সন্ধার সৌন্দর্যের মায়াবী রূপ।

সেন্টমার্টিন ভ্রমকারীদের সবচেয়ে আবেগের স্থান হল ছেড়াদিয়া দ্বীপ যা সচরাচর আমরা ছেড়াদ্বীপ নামে চিনি। পুরোপুরি প্রবাল দ্বারা গঠিত এ দ্বীপে মাত্র একটি পরিবার বাস করে। ছেড়াদ্বীপে রাতে থাকার কোন সুযোগ নেই। ভাটার সময় ছেড়াদ্বীপ সেন্টমার্টিনের সাথে যুক্ত থাকে। আর জোয়ারের সময় সম্পুর্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আপনি চাইলে জোয়ারে সময় ট্রলার বা স্পিড বোটে করে যেতে পারেন। সবচেয়ে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হল, আপনি ইচ্ছা করলে ভাটার সময় হেটে হেটে যেতে পারবেন এ দ্বীপে। প্রবাল আর বালুর উপর দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় অবশ্যই খুব সাবধানে হাটতে হবে কারন প্রবালগুলো খুবই ধারালো। এছাড়া, জেটিঘাটের পাশ থেকে সাইকেল বা মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়েও যাওয়া যায়। তবে, আপনি যদি ভালমানে রাইডার না হন তাহলে ভুলেও মোটবাইক বা সাইকেল নিয়ে যাওয়ার চিন্তা করবেন না।  এছানের কিন্তু আপনার যজন্য কেউ পিচঢালা রাস্তা তৈরি করে রাখে নি। যেতে হবে প্রবাল আর বালুর চাদরের উপর দিয়ে যা পাহাড়ি রাস্তার চেয়েও কয়েক গুন ঝুকিপূর্ন।

অবস্থান ও খাওয়া দাওয়া

সেন্টমার্টিন দ্বীপে অনেক খোট-বড় খাবারের হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলের খাবারের মেনুর সবচেয়ে আকর্ষনীয় উপকরন হল নানা রকম সামুদ্রিক মাছ। এছাড়া, মুগরগির ব্যবস্থাও আছে। তবে, আপনি যখন চোখের সামনে বিশাল আকারের সামুদ্রিক মাছগুলো আস্ত ভাজতে দেখবেন তখন অন্য খাবারগুলো আপনাকে খুব কমই আকর্ষন করবে। রাতের বেলা করতে পারেন বারবিকিউ পার্টির আয়োজন।

পর্যটন মৌসূমে কক্সবাজারের আবাসিক হোতেলগুলোর ভাড়া থাকে আকাশছোয়া। এ সময় যদি সরকারী ছুটির মধ্যে সেন্টমার্টিন যান তাহলে অবশ্যই আগে থেকে হোটেল বুক করে যেতে হবে। অন্যথায় আপনার থাকতে পারার সম্ভাবনা খুবই কম। একটু অল্প খরচে থাকতে চাইলে স্থানীয় কিছু বাসাবাড়িতে অনেক সময় থাকা যায়। গুগলে সার্চ করে সেন্টমার্টিনের হোটেলগুলোর ফোন নম্বর নিয়ে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

আর যদি রাতে থাকার পরিকল্পনা না থাকে তাহলে দিনে গিয়ে দিনেও ফিরে আসতে পারেন। সাধারণত সকাল নয়টার দিকে টেকনাফের দমদমিয়া জেটি থেকে সেন্টমার্টিনগামী জাহাজগুলো ছেড়ে যায় এবং দুপুর আড়াইটার মধ্যে সেন্টমার্টিনের জেটি ত্যাগ করে। এভাবে গেলে আপনি ঘুরে দেখার জন্য মাত্র দুই থেকে তিন ঘন্টা সময় পাবেন।

যেভাবে যাবেন

আপনার যদি কক্সবাজার ভ্রমনের পরিকল্পনা থাকে তাহলে সাথে যুক্ত করতে পারেন সেন্টমার্টিনকে। কক্সবাজারের কলাতলী থেকে খুব ভোরে বেশ কয়েকটি বাস টেকনাফের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। মেরিন ড্রাইভ রোড ধরে যাওয়ার সময় দেখতে পারেন এর অসামান্য সৌন্দর্য। এরপর নয়টার আগেই টেকনাফের দমদমিয়া জেটি ঘাট থেকে টিকেট সংগ্রহ করতে হবে। সাধারণত নয়টার পরপরই সেন্টমার্টিনগামী সবগুলো জাহাজ জেটি ত্যাগ করে। বর্তমানে সরাসরি কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্যও কর্নফুলী গ্রুপের একটি বিলাশবহুল জাহাজ রয়েছে। আর আপনি যদি কক্সবাজার না গিয়ে সরাসরি সেন্টমার্টিন যেতে চান তাহলে ঢাকা থেকে সরাসরি টেকনাফ গিয়েও সেন্টমার্টিন যেতে পারেন।

আর পর্যটন মৌসুম ছাড়া অন্য যেকোন সময় গেলে যেতে হবে ট্রলারে। যদিও ট্রলারে যাওয়া বেশ ঝুকিপূর্ন কিন্তু এ সময় গেলে পর্যটন মৌসুমের খরচের পাঁচ ভাগের একভাগ খরচে সেন্টমার্টিন ঘুরে আসা যায়। যাওয়ার আগে আবহাওয়া বার্তা খুব ভালভাবে জেনে সাগর শান্ত থাকা অবস্থায় রওনা হলে সাধারণত খুব বেশি ঝামেলার মধ্যে পরতে হয় না।