ঢাকা জেলা
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। শুধু রাজধানীই নয়; দেশের অন্যতম একটি প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী
শহর ঢাকা। এখনও দেশের অনেক
প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছেই ঢাকা শহর একটি স্বপ্নের নাম। খেটে খাওয়া মানুষটির কাছে ঢাকা শহর এক জীবিকার সন্ধানীর নাম। ‘লাল নীল বাতির শহর’ নামে
পরিচিতি ঢাকাকে নিয়ে রচিত হয়েছে বহু গান আর নাটিকা। ঐতিহ্যবাহী এ শহরটি দক্ষিন এশিয়ার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ন
শহরও। ঢাকা শহরে রয়েছে
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গবেষক এবং বিজ্ঞানী তৈরির কারখানা
নামে পরিচিত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ
বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সহ বেশ কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, চারটি
সরকারী মেডিকেল কলেজ, একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, প্রায়
একশরও অধিক বেসরকারী প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ এবং আরও অনেক নামকরা বিদ্যাপিঠ। ঢাকা জেলায় রয়েছে দুটি সিটি কর্পোরেশন, ৪১
টি মেট্রোপলিটন থানা, তিনটি পৌরসভা, ৫ টি উপজেলা এবং প্রায় দুই হাজার
গ্রাম। ঢাকা জেলার আয়তন
১৪৬৩ বর্গ কিলোমিটার এবং ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী জেলাটির জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি
বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ৮৬০০ জন।
ইতিহাস ঐতিহ্য
বহু প্রাচীনকাল থেকেই
ঢাকা শহর ঐতিহ্যবাহী হলেও মূলত শহরটি বেশি প্রসিদ্ধ হয় মোঘল আমলে। ১৬১০ সালে সুবাদার ইসলাম খান বাংলার রাজধানী রাজমহল থেকে ঢাকায়
স্থানান্তর করেন এবং ঐ সময়ের মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের নামানুসারে ঢাকার নামকর করা হয়
জাহাঙ্গীরনগর। ভৌগলকভাবে নদীপথবেষ্টিত
হওয়ায় বহু পূর্ব থেকে ঢাকা ছিল শিল্প ও বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্রস্থল। ঢাকাই জামদানি এবং বেনারসি শুধু ঐতিহ্যবাহীই নয় বরং আজও সারা
পৃথিবীতে সৌখিন লোকদের চাহিসা মিটিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত। এছাড়াও বহু পূর্ব থেকেই পোষাক শিল্প, হসশিল্প, কুটির
শিল্প এবং রন্ধনশিল্পে অনেক বেশি উন্নত ছিল ঢাকা। ১৯৭১ সালে সবাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর ঢাকার ঐতিহ্য আরও
বেশি বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায়। দেশের সীমানা পার
করে তা স্থান পায় পুরো বিশ্বের বুকে। বাংলাদেশের বৈদেশিক
মুদ্রার অন্যতম একটি অংশ আসে পোষাক শিল্প থেকে যা মূলত ঢাকা কেন্দ্রিক।
১৯৮৪ সালের আগে আশেপাশের
বেশ কয়েকটি জেলা ঢাকার অধীনে মহকুমা হিসাবে ছিল।
দর্শনীয় স্থান
ঢাকার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত
হয়েছে বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষা নদী। ঐতিহ্যবাহী এবং
প্রসিদ্ধ এ জেলাটিতে রয়েছে বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী স্থান এবং বিনোদন কেন্দ্র। ঢাকার ঐতিহ্যের কথা যেমন এত স্বপ্ল পরিসরে লিখে শেষ করা যায়
না তেমনি এর ঐতিহ্যবাহী স্থান অগুলোর বর্ননাও এত স্বল্প কথায় লেখা সম্ভব নয়। আহসান মঞ্জিল, লালবাগ কেল্লা, ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাইতুল
মুকাররম মসজিদ, ঢাকেশ্বরী মন্দির, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ইত্যাদি ঢাকার
অন্যতম কিছু ঐতিহাসিক স্থান। তাছাড়া জাতীয় জাদুঘর, জাতীয়
চিড়িয়াখানা, শিশুপার্ক, রমনা পার্ক, বসুন্ধরা রিভার্স ভিউ, যমুনা
ফিউচার পার্ক (শপিং কমপ্লেক্স), বসুন্ধরা সিটি (শপিং
কমপ্লেক্স) এবং জাতীয় সংসদ ঢাকার অন্যতম কিছু দর্শনীয় স্থান। ঢাকায় বেশকিছু আধুনিক সুবিধা সম্বলিত বিনোদন কেন্দ্রও রয়েছে। সাভারের ফ্যান্টাসি কিংডম এবং বঙ্গবন্ধু নভথিয়েটার এর মধ্যে
অন্যতম।
সর্বপরি ইট-পাথর আর কংক্রিটের
এ শহরটির প্রতিটি পরতে পরতে রয়েছে ঐতিহ্য আর সৌন্দর্যের ছাপ। রয়েছে ছোট ছোট অনেক বিনোদন এবং অবকাশ যাপন কেন্দ্র। ঢাকার তুলনা আসলে ঢাকা নিজেই।
যাতায়াত
সারা বাংলাদেশের সাথেই
ঢাকার সড়ক যোগাোগ রয়েছে। শুধু বরিশাল ছাড়া
অন্য সবগুলো বিভাগের জেলার সাথে রয়েছে রেল যোগাযোগ। গুরুত্বপূর্ন কিছু রুটের সাথে আকাশপথে যোগাযোগও রয়েছে। ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মাধ্যমে
পরিতিদিন প্রায় দুইশরও অধিক আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালিত হয়। ঢাকার অভ্যন্তরে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াতের জন্য রয়েছে
বেশ কিছু লোকাল বাস সার্ভিস, সি এন জি চালিত অটোরিক্সা এবং উবারের কার ও বাইক সার্ভিস।
0 Comments