বাগেরহাট জেলা
বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা বিভাগের অন্তর্গত একটি জেলা বাগেরহাট। বাগেরহাট জেলার আয়তন প্রায় ৩৯৬০ বর্গ কিলোমিটার এবং ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ৩৮০ জন। বাগেরহাটের উত্তরে গোপালগঞ্জ ও নড়াইল জেলা, পশ্চিমে খুলনা জেলা, পূর্বে পিরোজপুর ও বরগুনা জেলা এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। মোট নয়টি উপজেলা নিয়ে বাগেরহাট জেলা গঠিত। এগুলো হল বাগেরহাট সদর, কচুয়া, চিতলমারী, ফকিরহাট, মোংলা, মোড়লগঞ্জ, মোল্লাহাট, রামপাল ও শরনখোলা। বেশ কয়েকটি নদী প্রবাহিত হয়েছে বাগেরহাট জেলার মধ্যে দিয়ে। এর মধ্যে মধুমতি, পশুর ও বালেশ্বর অন্যতম। এ জেলার অন্যতম আকর্ষন হল সুন্দরবন। শুধু বাংলাদেশ নয় বরং বহিঃবিশ্বের কাছেও সুন্দরবনের কারনে বাগেরহাট একটি সুপরিচিত নাম।
ইতিহাস ঐতিহ্য
বহু প্রাচীনকাল থেকেই বাগেরহাট এলাকায় জনবসতি থাকার প্রমান পাওয়া যায়। ধারনা করা হয় বহু প্রাচীনকাল থেকেই অনার্য সম্প্রদায়ের লোকেরা এ এলাকায় বসবাস করত। ইসলাম প্রচারক খান জাহান আলী এ এলাকায় আসলে তার অতি উত্তম আচারন এ এলাকার লোকজনের মধ্যে ব্যপক আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং এখানের লোকজন দলে দলে ইসলাম গ্রহন করা শুরু করে। খান জাহান আলীর নির্মিত ষাট গম্বুজ মসজিদ শুশু এ অঞ্চলেরই নয় বরং সারা বাংলাদেশের একটি অসামান্য কীর্তি এবং প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন। আসলে বাগেরহাট জেলার ইতিহাসের একটি বিরাট অংশ জুড়েই রয়েছে খান জাহান আলীর ইতিহাস। খান জাহান আলী শুধু ধর্ম প্রচারক হিসাবে নয় বরং একজন আদর্শ বিচারক হিসাবেও এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে অনেক বেশি সমাদৃত ছিলেন।
বাঙ্গালাদেশের স্বাধীনতা উত্তর এবং পূর্ব প্রতিটি আন্দোলন এবং সংগ্রামে বাগেরহাট এলাকার লোকজনের ছিল সরব অংশগ্রহন।
দর্শনীয় স্থান
বাগেরহাট বাংলাদেশের অন্যতম একটি ঐতিহাসিক এবং সুন্দর জেলা। দর্শনীয় স্থান এবং প্রত্নতাত্বিক নিদর্শনে পরিপূর্ন এ জেলাটি। দর্শনীয় স্থানের তালিকায় সর্বপ্রথম যে নামটি আসে তা হল ষাট গম্বুজ মসজিদ। প্রায় আট ফুট পুরু দেয়ালের এ মসজিদটির নাম ষাট গম্বুজ মসজিদ হলেও মসজিদের গম্বুজের সংখ্যা মূলত ৮১ টি। অনেকেই মন্তব্য করেন যে আজ পর্যন্ত এ মসজিদের গম্বুজের সংখ্যা কেউ সঠিকভাবে গননা করতে পারে নি। কথিত আছে যে মসজিদের বিশাল বিশাল পাথরের পিলারগুলো খান জাহান আলী তার অনুগত জ্বীন সৈনিকদের সাহায্যে ভাসিয়ে এনেছিলেন। জেলার আদও একটি দর্শনীয় স্থান হল সুন্দরবন। এ জেলা থেকে সুন্দরবনের বেশ কয়েকটি স্পট খুব ভালভাবে দেখা যায়। এছাড়া অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে খান জাহান আলীর সমাধি, কোদলা মঠ, রেজা খোদা মসজিদ, জিন্দা পীর মসজিদ, ঠান্ডা পীর মসজিদ, এক গম্বুজ মসজিদ প্রভৃতি।
যাতায়াত
ঢাকা থেকে সরাসরি বাগেরহাট পর্যন্ত রেল রোগাযোগ নেই। তবে খুলনাগামী সুন্দরবন এবং তিস্তা এক্সপ্রেসে খুলনা পর্যন্ত গিয়ে বাস বা সিএঞ্জি চালিত অটোরিক্সায় বাগেরহাট যাওয়া যায়। ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ এবং মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে সরাসরি বাগেরহাটগামী এসি এবং নন এসি বাস পাওয়া যায়।
0 Comments