Recents in Beach

header ads

কক্সবাজার জেলা l Coxbazar district of Bangladesh

কক্সবাজার জেলা

বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের জেলা কক্সবাজার  বাংলাদেশের পর্যটিনি রাজধানী নামে পরিচিত এ জেলাটি চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত। বিশ্বের সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকতের কারনেই এ জেলাটি সারা পৃথিবী বিখ্যাত। দেশের বাহির থেকে বাংলাদেশে যেসব পর্যটক আসে তাদের বেশিরভাগই শুধুমাত্র কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দেখার জন্য। এছাড়াও কক্সবাজার থেকে টেকনাজ পর্যন্ত সাগর পার দিয়ে চলে যাওয়া প্রায় দেড়শ কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ রোড, আর সেন্টমার্টিনের মন ভোলানো সৌন্দর্য এ জেলাকে সত্যিই অনন্য করে রেখেছে। কক্সবাজার জেলার আয়তন ২৪৯১ বর্গ কিলোমিটার এবং ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ৯২০ জন। ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশের মানচিত্রের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত এ জেলাটির উত্তরে চট্টগ্রাম জেলা, পূর্বে বান্দরবন জেলা, নাফ নদী এবং তার ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। আটটি উপজেলা নিয়ে গঠিত কক্সবাজার জেলা। এগুলো হল- কক্সবাজার সদর, উখিয়া, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, টেকনাফ, পেকুয়া, মহেশখালি এবং রামু। কক্সবাজার জেলা সত্যিই বাংলাদেশের একটি সম্পদ।

ইতিহাস ঐতিহ্য

সাগর পারে অবস্থিত হওয়ায় বহু পূর্ব থেকে এ অঞ্চলে মানুষের বসতি গড়ে উঠেছিল। প্রাচীনকালে বিভিন্ন বাণিজ্যিক কাফেলার বড় বড় পণ্যবাহী নৌকা এ অঞ্চলে আসত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন থেকে জানা যায়। অষ্টম শতাব্দীতে অনেক আরব বণিকরা এ অঞ্চলে ব্যবসার উদ্দেশ্যে আসতেন। তাদের সংস্পর্সে এসে এ অঞ্চলের নিম্নবর্ণের হিন্দু এবং বৌদ্ধরা অনেকেই ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিল। তবে প্রাচীন এবং মধ্যযুগের একটি বিরাট অংশ জুড়েই এ অঞ্চলটি আরকান রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। বৃটিশ আমলের প্রথমদিকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সমুদ্রের তীরবর্তী এলাকাগুলোর প্রতি আলাদাভাবে দৃষ্টি দেয়।

প্রাচীনকালে এ অঞ্চলটি পাংলকি বা পানোয়া নামেই পরিচিত ছিল। এ অঞ্চল জুড়ে প্রচুর হলুদ ফুলে আচ্ছাদিত থাকত বলে এমন নামকরন করা হয়েছিল।  ১৭৯৯ সালে ইংরেজ অফিসার ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স এ অঞ্চলে একটি বাজার প্রতিষ্ঠিত করেন যা স্থানীয়দের কাছে কক্সের বাজার নামে পরিচিত ছিল। পরে আংশিক পরিবর্তিত হয়ে এ অঞ্চলটি কক্সবাজার নামে পরিচিতি পায়। প্রথমদিকে কক্সবাজারকে চট্টগ্রাম জেলায় একটি থানা এবং পরবর্তীতে মহকুমা করা হয়। পরে ১৯৮৪ সালে প্রশাসনিক পূনর্গঠনের কারনে সকল মহকুমাকে জেলায় পরিণত করা হয় এবং এ সময় কক্সবাজারও জেলায় রুপান্তরিত হয়।

দর্শনীয় স্থান:

কক্সবাজার জেলার দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে লিখতে নেয়া যেন নারিকেলের খোলে সাগর পারি দেয়ার মত। এ জেলার প্রতিটি পরতে পরতে লুকিয়ে আছে অসামান্য সৌন্দর্যের হাতছানি। তবে কক্সবাজারে আগত দর্শনার্থীদের ভ্রমনের তালিকায় প্রথমেই থাকে কক্সবাজার সমুদ্র সৌকত। বিশ্বের সর্ববৃহৎ এ সমুদ্র সৌকতটিতে বেশি কিছু পয়েন্ট রয়েছে। এর মধ্যে কলাতলী বিচ দর্শনার্থীদের বেশি পছন্দের। তবে কক্সবাজারের আসল সৌন্দর্যের হাতছানি খুজে পাওয়া যায় বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে। সেন্টমার্টিনের আবার সবচেয়ে আকর্ষনীয় পয়েন্ট হল ছেড়াদিয়া দ্বীপ যা স্থানীয়দের ভাষায় ছেড়াদ্বীপ নামে পরিচিত। এছাড়া কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্রের তীর ঘেষে নির্মিত প্রায় দেড়শ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ রোড, হিমছড়ি ঝর্না, ইনানী বিচ, মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপ, শাহপরীর দ্বীপ, ইনানী রয়েল রিসোর্ট, টেকনাফ উপজেলার নাম নদীরের কূলের মাথিনের কূপ, এবং রামুর বৌদ্ধ মন্দির এ জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান। সাধারনত নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত কক্সবাজার ভ্রমনের পিক টাইম ধরা হয়। এ সময় এখানে প্রচুর পর্যটক থাকে এবং হোটেলগুলোতেও অনেক বেশি ভীড় থাকে। শুধু এ সময়ই টেননাফ থেকে সেন্টমার্টিনগামী জাহাজগুলো চলাচল করে।

যাতায়াত

দেশের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন স্পট হওয়ায় দেশের সবগুলো বড় বড় পরিবহন কোম্পানিই তাদের সবচেয়ে বেশি বালসবহুল বাসগুলো ঢাকা-কক্সবাজার রুটে যাত্রী পরিবহনের জন্য দিয়ে থাকে। ঢাকা থেকে গ্রীন লাইন। সেন্টমার্টিন পরিবহন, লন্ডন এক্সপ্রেস, সোহাগ পরিবহন ইত্যাদি শীর্ষস্থানীয় বিলাসবহুল বাস কোম্পানিগুলোর বেশ কিছু এসি বাস প্রতিদিন ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাতায়াত করে। এছাড়া হানিফ, শ্যামলী, আইকন সহ বেশ কিছু পরিবহনের এসি ও নন এসি বাস ঢাকা থেকে কক্সবাজার রুটে প্রতি দিন যাতায়াত করে করে। ঢাকা থেকে বিমানেও কক্সবাজার যাওয়া  যায়। তবে ট্রেনে সরাসরি যাওয়া যায় না। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ট্রেনে গিয়ে চট্রগ্রাম থেকে বাসে যাওয়া যায়। সেন্টমার্টিন যেতে চাইলে দুটি উপায় আছে। ঢাকা থেকে কয়েকটি বাস সরাসরি টেকনাফ যায়। এসব বাসে টেকনাফ গিয়ে সেখান থেকে শিপে করে যেতে পারেন। অথবা ঢাকা থেকে কক্সবাজার গিয়ে নয়নাভিরাম মেরিন ড্রাইভ রোড ধরে টেকনাফ গিয়ে যেতে পারেন। অতি সম্প্রতি সরাসরি কক্সবাজার থেকে কর্নফূলী নামের একটি শিপ সরাসরি কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন যায়।

কক্সবাজারে থাকার জন্য বেশ কিছু তারকা মানের হোটেল রয়েছে। পাঁচ তারকা হোটেলও রয়েছে কয়েকটি। আবার সাধারন পর্যটকদের জন্য স্বল্প দামের হোটেলও রয়েছে প্রচুর। অল্প খরচে ফ্যামিলি নিয়ে থাকার জন্য ফ্লাটও রয়েছে। অফ সিজনে গেলে (নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত পিক সিজন। বাকি সময় অফ টাইম) হোটেল ঠিক করার আগে অবশ্যই দামাদামি করে নেবেন। অনেক সময় নির্ধারিত ভাড়ার তিন ভাগের এক ভাগ দামেও হোটেল ভাড়া পাওয়া যায়।

তবে অফ সিজনে সেন্টমার্টিনগামী কোন শিপ চলাচল করে না। এ সময় কেউ যেতে চাইলে ট্রলারে যাওয়া যায়। তবে এটি বেশ ঝুকিপূর্ন।


Post a Comment

0 Comments